হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য
‘জলের মরুভূমি’ হওয়ার পথে টাঙ্গুয়ার হাওর
- আপলোড সময় : ২৬-১১-২০২৪ ১০:০০:৩৮ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৬-১১-২০২৪ ১০:০০:৩৮ পূর্বাহ্ন
শহীদনূর আহমেদ ::
‘জলের মরুভূমি’ হওয়ার পথে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রামসার সাইট খ্যাত মিঠাপানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর। অসাধু চক্র কর্তৃক নিষিদ্ধ জাল দিয়ে অবাধে মা মাছ শিকার, ফাঁদ পেতে পাখি হত্যা, হিজল-করছ গাছ কেটে উজাড়, ইঞ্জিনচালিত নৌকায় অবাধ বিচরণ ও যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা এসব নানা কারণে দিন দিন বিপর্যয়ের মুখে প্রকৃতির লীলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর।
টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। বরং পর্যটন বিকাশের নামে সংরক্ষিত এলাকায় সরকারের গৃহীত উদ্যোগ নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে দাবি স্থানীয়দের। স্থানীয়দের দাবি, টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় অচিরেই সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে।
প্রায় ১২৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির এই জলাভূমি। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গুয়ার হাওরকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি এই হাওরকে রামসার সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নয় কুড়ি কান্দার ছয় কুড়ি বিল নামে পরিচিত টাঙ্গুয়ার হাওর ২০০৩ সালের ৯ নভেম্বর থেকে নিয়ন্ত্রণ নেয় জেলা প্রশাসন। টাঙ্গুয়ার হাওর ব্যবস্থাপনাসহ সমাজভিত্তিক টেকসই উন্নয়নে পরবির্ততে সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন (এসডিসি) এবং আইসিইউএনসহ বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও দৃশ্যমান তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি এই হাওরের। এক সময় এই হাওরে ২৫০ প্রজাতির পাখি, ১৪০ প্রজাতির মাছ , ১৫০ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং বিভিন্ন প্রকারের জলজ উদ্ভিদসহ হিজল, করচ, বরুণ, নলখাগড়াসহ নানা প্রকারের প্রাণীর অভয়ারণ্য ছিল। সময়ের পরিক্রমায় বিলুপ্তের পথে হাওরে এসব জীববৈচিত্র্য।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজারো পর্যটক ভাড়ায় চালিত ইঞ্জিন নৌকায় টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রবেশ করেন। পর্যটকেরা কোমল পানীয়সহ বিভিন্ন প্লাস্টিক বর্জ্য হাওরের পানিতে ফেলছেন। টাঙ্গুয়ার হাওরপাড় সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামের অসাধু লোকজন রাতের আঁধারে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করে থাকেন। এছাড়া প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে হিজল-করচ গাছ কেটে নিয়ে যায় একটি অসাধু চক্র। শীতকালে আসা অতিথি পাখি নির্বিচারে শিকার করে স্থানীয় বাজারে বিক্রিও করে তারা।
টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের বাসিন্দা রয়েল আহমদ জানান, ছোটবেলায় টাঙ্গুয়ার হাওরে যেসকল মাছ দেখেছি, এখন এসব মাছের অনেক প্রজাতির দেখা মিলেনা। অবাধে মাছ শিকারের কারণে অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়েগেছে। আগের মতো পাখি আসে না। হাওরে নলখাগড়া নেই। হিজল করচ গাছের সংখ্যাও আগের মতো
নেই। দিন দিন সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে টাঙ্গুয়া।
পরিবেশ বিশ্লেষকরা মনে করেন টাঙ্গুয়ারের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। বহুমুখী উদ্যোগের পাশাপাশি যথাযথ আইনের প্রয়োগ না হলে অচিরেই ‘জলের মরুভূমি’তে পরিণত হবে দেশের এই সংরক্ষিত এলাকা।
সুনামগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ফলুল করিম সাইদ বলেন, আমরা টাঙ্গুয়ারের হাওরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে হুমকির মুখে টাঙ্গুয়ার হাওর। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের আশঙ্কা অচিরেই বিনষ্ট হতে পারে দেশের এই সংরক্ষিত এলাকা। হাওরে মাছ, জলজ উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এক্ষেত্রে এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় টাঙ্গুয়ার হাওরকেন্দ্রিক তিন বছর মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি স্টাডি চলমান রয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরকেন্দ্রিক পর্যটন ও জীববৈচিত্র্যের বিষয়ে সরকারে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা জানান তিনি। ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, শুষ্ক মৌসুমে জলাধার শুকিয়ে যাতে কেউ মাছ ধরতে না পারে সে লক্ষ্যে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ